স্বাধ্যায় কি? অবধূতকে স্বাধ্যায় নিয়ে গুরু সন্নিধ্যানে প্রশ্ন করা হলে অবধূত স্বাধ্যায় কি বুঝিয়েছিলেন।
স্বাধ্যায় হল আত্মসমীক্ষা। যার মাধ্যমে সাধক নিজের সাধনা, নিজের অনুভব, নিজের অনুভূতি ও বোধের বিশ্লেষণ করবে। এর মাধ্যমে সাধক নিজের কোথায় প্রতিবন্ধকতা তা বোঝার চেষ্টা করবে। চেষ্টা করবে নিজেকে কোন জায়গায় পরিবর্তন করলে তবেই সাধক সাধনায় আরো অগ্রসর হতে পারবে।
সাধকের যদি নিয়ত বা intention ঠিক না থাকে তবে সাধক কোনো ভাবেই আর অগ্রসর হতে পারে না। নিজে এক মরীচিকার কুহেলীতে প্রবেশ করে। একসময় তার মানসিক গঠনই তার সামনে প্রকান্ড প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। ঈর্ষা, দম্ভ, এগুলোর জন্ম হতে থাকে। ফল পাওয়া স্বত্বেও বিশ্বাস চলে যেতে থাকে। প্রকান্ড প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। বার বার ফল পাওয়ায় যে বিশ্বাস জন্মায় তা সে ক্ষুদ্র স্বার্থে ভুলে যায়।
সাল ২০০২ ভারতবর্ষের কোনো এক শহর। না তখনকার হিসাব অনুযায়ী B গ্রেড বন্দর শহর। একটি ৪তারা হোটেল তার ৭তলায় ডিনারের ব্যবস্থা। এক গুপ্ত যোগী সঙ্গে আরও ৩জন মিলে গেলেন। জ্ঞানগঞ্জের নির্দিষ্ট মিশন।কেউ জানেই না যে তিনি একজন গুপ্ত যোগী। ওই জ্ঞানগঞ্জের গুপ্ত যোগীই হলেন আদিগুরু, আদিযোগী ।
আসলে সাধক বুঝতেও পারেনা জগদম্বা কখন সেই সাধকের পরীক্ষা নিতে শুরু করে দিয়েছে। এমন হয় যে গুরু পথ দেখালো তাকেই অবিশ্বাস করতে শুরু করে। যার শক্তি সে ব্যবহার করছে তার ওপরই আঙ্গুল তুলতে শুরু করে। কৃতজ্ঞতা কমতে থাকে চলে আসে অহংকার। সমর্পন কমতে থাকে। জীবনের আরো নানা ভুলভুলাইয়াতে সাধক হারিয়ে যেতে থাকে। তার নিজের স্বত্তাকে ভুলে গিয়ে গুরুনিন্দাও শুরু করে। আদ্যাশক্তি তাঁর প্রভাব আরও বাড়িয়ে দেয়, ভুলে যায় অনেক কিছু। প্রভাব এতটাই পড়তে থাকে সাধক ক্রমে হিতাহিত জ্ঞান ভুলে যায়। একটু একটু করে নিজের ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়।
সাধনা যতটা জরুরি, স্বাধ্যায় ও ঠিক ততটাই জরুরি। সাধনা ও পরবর্তী স্বাধ্যায় একমাত্র সাধককে স্থির লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে এসবের আগে সত্যিকারের কৃতজ্ঞতা থাকতে হয়।
যারা সেই জায়গায় পৌঁছেছে তারা এই ভাবেই পৌঁছেছে। এর কোনো দ্বিতীয় পথ নেই।
তাই প্রতি মুহূর্তে স্বাধ্যায় ছাড়া সাধক কোনো ভাবেই এগোতে পারে না।
এখন প্রশ্ন হলো স্বাধ্যায়টা করবো কি নিয়ে?
তাই স্বাধ্যায়ের আগে চাই খনন, এরপর কর্ষণ। খনন ও কর্ষণ থেকে উঠে আসা ঘটনাকে নিরন্তর স্বাধ্যায়ের মাধ্যমে বোধে আনলে তবেই জ্ঞান আসে। তত্ত্বকে সাধক বুঝতে পারে।
এই প্রসঙ্গে এক কঠিন ও ভয়ঙ্কর কাহিনী বললেন অবধূত
সাল ২০০২ ভারতবর্ষের কোনো এক শহর। না তখনকার হিসাব অনুযায়ী B গ্রেড বন্দর শহর। একটি ৪তারা হোটেল তার ৭তলায় ডিনারের ব্যবস্থা। এক গুপ্ত যোগী সঙ্গে আরও ৩জন মিলে গেলেন। কেউ জানেই না যে তিনি একজন গুপ্ত যোগী। ওই জ্ঞানগঞ্জের গুপ্ত যোগীই হলেন আদিগুরু, আদিযোগী । নির্দিষ্ট মিশন, জ্ঞানগঞ্জের নির্দেশ। ওই বাকী তিনজনের মধ্যে যিনি ডিনারের নিমন্ত্রণ করেছিলেন তিনি তো আদর আপ্যায়ন করে খাবার টেবিলের দিকে নিয়ে গিয়ে বসালেন।
নানা রকম পদের অর্ডার হলো। একটা খাবার আসে তো আর খাবার আসে না. দুজন খেতে পারছে তো বাকি দুজন খেতে পারছে না। অনেক বলে বলে খাবার এলো। তারপর দেখা গেলো যে চিংড়ি মাছের পদটি যেটা দেওয়া হলো সেটা গন্ধ হয়ে গেছে এবং খাবারটি নষ্ট হয়ে গেছে। রিসেপশন এ বলে ম্যানেজারকে ডাকা হলো এরকম খাবার কেন দেওয়া হলো। যে লোকটি এলো তার কোটে ব্যাজে লেখা Butler, লেখা Butler এসে বললো আমি General Manager. পুরো কথাটাই তাকে English এ বললে সে এমন ভাব করলো যেন সে English-এ কথাই বলে না। পুরোটাই ওই রাজ্যের স্থানীয় ভাষায় কথা বললে তাকে আবার হিন্দিতে বলা হলো। তাতে আবারো সেই ভাব করলো যেন হিন্দি বোঝে না। আরও মজার কথা এই Butlerটি বাঙালি। জ্ঞানগঞ্জের সেই গুপ্ত যোগী পুরোটাই জানতেন।কিন্তু তাকে এক সুদক্ষ্য নটের ভূমিকা পালন করতে নির্দেশ ছিল। তখন সেই গুপ্ত যোগী যে বহু ভাষায় পারদর্শী সে তার সেই ভাষায় বললে সে তখন বললো তুমি কোথায় থাকো এই ভাষায় বলছো যে। এবার তার English বেরোলো। উচ্চপদস্থ বাঙালী যিনি রাতের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ করেছিলেন তিনি তো অবাক। তখন বলা হলো চিংড়ি মাছের পদটি থেকে অত্যন্ত দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। দুটি প্লেট অর্ডার করা হয়েছিল দুটো প্লেট খাবার পাল্টে দিতে। তা তিনি এক প্লেট খাবার তুলে নিয়ে গিয়ে বললেন আগে আমাদের শেফ পরীক্ষা করে বলবেন তারপর দেখা হবে। অত্যন্ত অপমান করলেন গুপ্ত যোগীকে। জ্ঞানগঞ্জের কঠোর নির্দেশ ছিল। সেই অনুযায়ী তাকে পরীক্ষা করা হলো। এমন একটা আত্মা ওই দেহে যাকে তার রাবনের মত অহংকার আর ঔদ্ধত্ব ধ্বংস করবে। সেই Butler সেই মানুষটি আদ্যন্ত মিথ্যে ও অহংকারে পরিপূর্ণ। সেই দিন থেকেই শুরু হলো তার চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যাবার। নির্দেশিত ব্যবস্থা ও সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে তাকে এক অর্ধমৃত প্রাণীতে পরিণত করা হলো।
লোকটি একজন গুরুর কাছ থেকে দীক্ষা পেয়েছিলো বেশ কম বয়েসে। সাধকের অহংকার সহ্য করা হয় না। তাই ওই পচা দুর্গন্ধ যুক্ত খাবারটার মতোই তার দেহটাও একদিন পচে গলে পূতিগন্ধময় হয়ে পড়ে থাকার অবস্থায় চলে এলো। আরও মজার কথা ওই মানুষটিকে তার পরিবারও কোনো সহায়তা করবে না। যারা করতে যাবে তারাও ওই একই ভাবে মরবে। তাই বহু সাধনা, বহু ক্ষনন , বহু কর্ষণ করেও সেই দিব্য পুরুষকে জানতে পারলো না। এত কিছু করে, এত তন্ত্র মন্ত্র করেও কেন হলো খুঁজে পেলোনা। সে একটাই কারণে তাহলো সেই জ্ঞানগঞ্জের গুপ্ত যোগীকে চেনবার ক্ষমতা তার ছিল না।