top of page
Writer's pictureSadhguru

রহস্যময় শ্রীশৈলম - পর্ব ৯

Aবং হলো ১৯৮০ সাল থেকে তার সাধনার জীবনের নানা কাহিনীকে তুলে ধরা। পূর্ব জীবনকে জানার জন্য অবধূত নানা কাজের সূত্রেও সেই সব জায়গায় ঘুরে বেড়ালেন সঙ্গে মিলিয়ে নিলেন নিজের জীবনের ছন্দকে।  অবধূতের জীবনের নানা ঘটনাকে তুলে ধরা হবে এই Aবং বিভাগে। তাঁর শ্রীশৈলম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এখানে দেওয়া হলো পর্বে পর্বে। আজকে নবম পর্ব। 




ছেলেটি এলো। আমায় বললো পাঠকাঠিতে আগুন ধরাও। নির্দেশ মতো গুহায় ঢুকে দেশলাই এনে পাঠকাঠিতে আগুন ধরালাম। ছেলেটির হাতে সেই জ্বলন্ত পাটকাঠি তুলে দিলাম। ওই কাঠি দিয়ে ছেলেটি মুখাগ্নি করলো সোমসুন্দরজীর আগের দেহের। আমার দুচোখ বেয়ে জল। কেন জানিনা আটকাতে পারলাম না নিজেকে।

 

ছেলেটি আমায় বললো মশাল ধরিয়ে চিতায় অগ্নিসংযোগ করো। মাটিতে পোতা মশালে অগ্নি সংযোগ করে মশাল তুলে চিতায় আগুন দিলাম। শীতের শুকনো কাঠ মুহূর্তে দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো।

 

বললেন এবার আরও কাঠ দাও ওপরে। দিলাম। আগুনের লেলিহান শিখা। গোটা চিতা জ্বলছে। আমায় বললেন ভেতরে চলো। পড়ন্ত দুপুর প্রায় বিকাল বলাই ভালো। আমি গুহার দিকে মুখ করলে বললেন ভেতরে যাও। আমি আসছি।

 

অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভিতরে গেলাম। কি যে হচ্ছে তা ঠিক ভাষায় বোঝাতে পারবো না। ধুনীর কাছে এসে দাঁড়িয়েছি। মিনিট পাঁচেক পরে ছেলেটি এলো। বার বার লিখছি ছেলেটি কারণ আমি যেন কোথাও একটা ওই ছেলেটিকে মেনে নিতে পারছিনা। একটা তীব্র অস্বস্তি কাজ করছে। বললো কম্বল গুলো ধুনীর পাশে যা আছে তুলে বাইরে দিয়ে দাও। ভালো করে গুটিয়ে নিয়ে বাইরে এসে দেখি সেই যুবক দাঁড়িয়ে আছে। সেই বৃদ্ধ সন্ন্যাসী আর নেই। ইতস্তত করছি কম্বল কোথায় রাখবো। ইশারায় দেখালো জায়গাটা। রাখলাম। চিতা জ্বলছে। ফাটছে হাড়গোড়। আগুন ঠিকরাছে। কি বীভৎস।

 

আমার ডাক পড়লো ভেতরে আবার গেলাম। বস তুমি এখানে। সিগারেট খাও। আমি বাইরে আছি। বিশ্রাম করো। বললাম দেখবো না। বললেন আর কিছু দেখার নেই তোমার। এরপর যা দেখবে সেগুলো তুমি সহ্য করতে পারবে না। কারণ ওই দেহটিকে তুমি শ্রদ্ধা ভক্তি করতে। কোথাও তোমার ভালোবাসা জড়িয়ে গেছে। আসলে আমরা দেহটাকে দেখি বলে তাকেই ভালো বেসে ফেলি। দেহ তো একটা পোশাক মাত্র। জীর্ণ হয়ে গেছে বলে নতুন দেহ। যেমন তোমরা পোশাক বদলাও। কথা গুলো চোখের সামনে যেন অনেক পর্দা খুলে দিলো। জীবনের এক নগ্ন কিন্তু অনিন্দ্য সুন্দর রূপ কে দেখতে পেলাম। সবকিছু যেন তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে মাথার ভেতর।

 

ব্যাগ থেকে সিগারেট বার করে ধরালাম। সিগারেটের নীল ধোঁয়ার সাথে যেন আমার বহু কিছু উড়ে চলে যাচ্ছে। টানছি আর মুখ থেকে ছাড়ছি ধূসর নীল ধোঁয়া। আমার চিন্তা ভাবনা আমার অতীতের ভয় এবং ভবিষ্যতের ভাবনা সব যেন ওই ধোঁয়ার সাথেই মিলিয়ে যেতে লাগল। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমার সামনে আমি বসে আছি। হ্যাঁ একদম আমার মতো দেখতে। আমি। নিরাভরণ আমিকেই দেখছি একদম হ্যান্ডশেক ডিসটেন্স এ বসে আছি। না কোনো কথা বলতে পারছিনা আমি। স্থির ভাবে আমার আমিকেই দেখছি।

এরপর কি হয়েছে কতক্ষন হয়েছে জানিনা। ঠান্ডা জলের স্পর্শে চোখ মেলে তাকাই। দেখি আমি মেঝেতে পড়ে আছি। ছেলেটি সামনে কমণ্ডল নিয়ে দাঁড়িয়ে। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ধুনি হালকা ভাবে জ্বলছে। গুহার ভিতর প্রদীপ জ্বলছে।

 

ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি। নতুন দেহের সোমসুন্দরজী বললেন আজকের ঘটনা এবং গুরুদেবের আশীর্বাদে দ্বিতীয়বার তোমার আত্মদর্শন হলো। কঠোর সাধনা করতে পারলে তবেই সর্বদা এই অবস্থায় থাকবে।

 

এখন ওঠো খেয়ে নাও। উঠে বসে দেখি একবাটি দুধ। বললাম দাহ শেষ হয়ে গেছে? বললেন হ্যাঁ। এখন ভোর হতে আর কিছুক্ষন বাকি।

 

দুধটা খেলাম। খিদে তেমন কিছু নেই। তবু খেলাম। বসে রইলাম। ছেলেটির দিকে তাকিয়ে। বললেন সকাল হলে সব গুছিয়ে নিও তোমার জিনিস। স্নান সেরে নিয়ে বেরোব আমরা। বললাম কোথায় যাবো? দ্রাক্ষারমম। সেতো বহুদূর। বললেন হ্যাঁ। কদিন লাগবে? তুমি যাবে না। তোমাকে শ্রীশৈলম পৌঁছে দেব। আমি যাব। আর যদি আমার সাথে যেতে চাও তো যেতে পারো। তবে তোমার অমরকণ্টক যাবার আছে। ফিরে গিয়ে আগে ওখানে যেও। পরে তোমার গুরু তোমায় দ্রাক্ষারমম নিয়ে যাবেন।

 

ভোর হলো। অর্কদেব উঠে পড়েছেন, আকাশে বেগুনি কমলা আলো। স্নান সেরে নিলাম। ব্যাগ প্রায় গোছানোই ছিল। যেটুকু যা ছিল ব্যাগে ভরলাম। তৈরী হয়ে নিলাম। একটা সাদা ধুতি তে সেই কিশোর। বললেন চলো। বললাম এই গুহা। বললেন অন্য্ কোনো যোগীর আবার ডেরা হবে। কেন আপনি আসবেন না। বললেন না। যিনি আসবেন আগেই বুঝে নেবেন এই গুহার অনুরনন।

 

আর আপনি কি রহস্যময় শ্রীশৈলমই থেকে যাবেন। না আমি যাবো নয়নাদেবী।

 

বেরিয়ে পড়লাম।

 

অলমিতি।




Share this Page

Subscribe

Get weekly updates on the latest blogs via newsletters right in your mailbox.

Thanks for submitting!

bottom of page