Aবং হলো ১৯৮০ সাল থেকে তার সাধনার জীবনের নানা কাহিনীকে তুলে ধরা। পূর্ব জীবনকে জানার জন্য অবধূত নানা কাজের সূত্রেও সেই সব জায়গায় ঘুরে বেড়ালেন সঙ্গে মিলিয়ে নিলেন নিজের জীবনের ছন্দকে। অবধূতের জীবনের নানা ঘটনাকে তুলে ধরা হবে এই Aবং বিভাগে। তাঁর শ্রীশৈলম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এখানে দেওয়া হলো পর্বে পর্বে। আজকে দ্বিতীয় পর্ব।
একটু দেরি হবে খাবার দিতে। আলাপচারিতা শুরু করলাম সন্ন্যাসী মহারাজের সাথে। জিজ্ঞেস করায় বললেন উনি আসছেন কাশীর কামরূপ মঠ থেকে। প্রায় চমকে উঠলাম অতি প্রাচীন এই মঠের কথা শুনে। আদি শঙ্করাচার্য দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই মঠ এবং মূলত বাঙালি সন্ন্যাসীই বেশি এই মঠে। এই মঠের এক উল্লেখযোগ্য উচ্চকোটির যোগী সন্ন্যাসী ছিলেন ভোলানন্দ গিরি মহারাজ। এই মঠের ব্যাপারে দারুণ এক কাহিনী আছে। এক বিখ্যাত বাঙালী সাধক সর্বানন্দ। এই মঠের ব্যাপারে দারুণ এক কাহিনী আছে। এক বিখ্যাত বাঙালী সাধক সর্বানন্দ। তিনি দশ মহাবিদ্যা সিদ্ধ হবার পরে চলে আসেন কাশীর এই মঠে। তন্ত্র সাধক সর্বানন্দ তিনি প্রতিদিন ওই মঠে থাকা দেবী গুহ্যকালীর সাধনা করেন। তান্ত্রিক পথে সাধনা তাই মৎস, মাংস, মদ্য এসবই দেওয়া হয় উপাচার হিসাবে। সেই নিয়ে বাকি সন্ন্যাসীদের ভেতরে উষ্মা। সন্ন্যাসীদের এই মঠে এসব কেন? তারা নানা ভাবে সর্বনান্দকে উতক্ত করতে লাগলো। বিরক্ত সর্বানন্দ একদিন ওই মঠ ছেড়ে চললেন বদ্রিকাশ্রমের পথে। সেই দিনই দুপুরে যখন সন্ন্যাসীরা খেতে বসেছেন তখন চারদিকে মদ ও মাংসের বৃষ্টি হতে লাগলো। তাদের খাওয়া দাওয়া মাথায় উঠলো। পরের দিন আবার একই অবস্থা। তৃতীয় দিন তৃতীয় দিন হবার পরে সবার মনে হলো এ নিশ্চই সর্বানন্দের আধ্যাত্মিক ক্ষমতার প্রভাব। সবাই ডাকতে ছুটলো সর্বানন্দকে। বদ্রিকাশ্রমের পথে সর্বনান্দকে পেলো তারা। তখন সর্বানন্দর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে ফিরিয়ে আনা হলো মঠে। এবং সেই মঠের মঠাধ্যক্ষ করা হলো।
এছাড়াও আরও নানা কারণে এ মঠ ভারতীয় আধ্যাত্মবাদের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। জিজ্ঞাসা করলাম মহারাজ কে আপনি নিশ্চই আগেও এসেছেন এখানে। বললেন হ্যাঁ অনেকবার। বললাম যদি কিছু মনে না করেন এই জ্যোতির্লিঙ্গ সম্পর্কে কিছু বলেন।
বৃদ্ধ সন্ন্যাসী মহারাজ নিস্পলক চোখে চেয়ে রইলেন আমার দিকে, তারপর একটু হেসে বললেন বাসে যেতে যেতে শুনবেন। খাওয়া দাওয়া হলো। একটু কাছাকাছি ঘোরাঘুরিও হলো। অনেকক্ষণ একভাবে বাসে বসে আছি, তাই না ঘুরলে হচ্ছিলো না।
বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেলো। ড্রাইভার সাহেব উঠে পড়লেন বাসে। আমরাও এক এক করে বাসে উঠে গেলাম। মহারাজ বললেন শুনুন আপনি যা জানতে চাইছিলেন। জ্যোতির্লিঙ্গের প্রথম আবির্ভাব কি ভাবে হলো, সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর মধ্যে শুরু হলো এক বিরাট ঝগড়া কে শ্রেষ্ঠ, এই সময় এক তীব্র জ্যোতির স্তম্ভ সৃষ্টি হলো যার আদি নেই অন্তও নেই। দুজনে প্রশ্ন করলো কে আপনি, উত্তর এলো আমিই সৃষ্টি, আমি ব্রহ্ম, আমি পরাৎপর শিব। সেই অনন্ত জ্যোতিস্তম্ভ কে দুজন প্রশ্ন করলো আমাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ ?
সেই অনন্ত জ্যোতিস্তম্ভ বললো তোমার দুজনে এই জ্যোতিস্তম্ভের মধ্যস্থল থেকে দুদিকে যাও, যে আগে অন্তে পৌঁছতে পারবে সেই হবে শ্রেষ্ঠ। ব্রহ্মা কিছুদূর গিয়ে ফিরে এসে বললো আমি শেষ অবধি আগে গিয়েছি আমিই শ্রেষ্ঠ, একটু পরে বিষ্ণু এসে বললো এর কোনো আদিঅন্ত নেই আমি পারিনি এর শেষে পৌঁছাতে। তখন সেই জ্যোতিস্তম্ভ বললো বিষ্ণু শ্রেষ্ঠ। তীব্র ক্রোধে ব্রহ্মা অভিশপ্ত হলো যে তার পূজা কখনো হবে না এই মিথ্যা বলার জন্য। সেই তীব্র ক্রোধে এমন পরিস্থিতি তৈরী হলো যে সৃষ্টি যায় যায়।
বিষ্ণু ক্রোধান্বিত শিবকে তুষ্ট করতে শিবস্তুতি শুরু করলেন। ধীরে ধীরে সেই জ্যোতিস্তম্ভ শান্ত হলো। এই জ্যোতিস্তম্ভই হলো জ্যোতির্লিঙ্গ। সন্ন্যাসীকে প্রশ্ন করলাম, ব্রহ্মার নাভিপদ্ম থেকে বিষ্ণুর উৎপত্তি কি তাহলে মিথ্যে কথা?
যদি শিব মহাপুরাণকে ভালো করে খতিয়ে দেখি তাহলে দেখবো ব্ৰহ্মাপুত্র প্রজাপতিদক্ষ শিবের মহিমাকে ছোট করে দেখাবার জন্য এই কান্ড করলো। তার মনগড়া এক বিশেষ বিষ্ণু মূর্তি নির্মাণ করলো। যাতে বিষ্ণুকে শিব অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দেখানো যায়। সেই মূর্তিতে দেখানো হলো বিষ্ণুর নাভি পদ্ম থেকে ব্রহ্মার উৎপত্তি। প্রজাপতি দক্ষই শুরু করেছিল শিবের বিরোধ এবং সব ভাবে শিবের নাম ও নিশান মুছে দেবার এক ঘৃণ্য চক্রান্ত শুরু হলো। মহাবিষ্ণু বলে বিষ্ণুর যে মূর্তি তৈরী হলো তাতে শিবের কোনো স্থান নেই। যেন টেন প্রকারেণ ত্রিদেবকে মুছে দেবার চেষ্টা। আরও মজার যিনি ব্রহ্ম সেই শিবের স্থান নির্ণয় হলো বিষ্ণুর হাতের তলায়। তাও অনেক বিরোধিতার পরে।
চলে এলাম অনেকটা পথ গল্প করতে করতে। শুনলাম শ্রীশৈলে মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গের কথা। বাস এসে থামলো একটি চেকপোস্টের কাছে। তার আগে থেকেই রাস্তার দুধারে প্রকৃতির ও পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। অপূর্ব সে দৃশ্য। চেকপোস্টটি হলো Nagarjunsagar-Srisailam Tiger Reserve Forest. ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড়ো টাইগার রিসার্ভ ফরেস্ট। খোলা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বাস যাবে। চেকপোস্ট এ বলা হলো কোনো প্লাস্টিক বোতল বা প্লাস্টিকের প্যাকেট জানলা দিয়ে ছুড়ে ফেলবেন না, বন্য পশু পাখিদের কোনো খাবার দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
আমাদের সাথে সাথে ওই বাইকের আরোহীরা ও এলেন। বাস এগিয়ে চললো এবার গতি একটু ধীর। প্রতিটি জায়গায় বোর্ডে নির্দিষ্ট করা আছে কি গতি হবে যানবাহনের। সঙ্গে নানা নির্দেশ। কোথায় পাখি, কোথায় কোন ধরনের বাঁদর। দুপাশে ঘন জঙ্গল, মাঝে মসৃন রাস্তা।
কন্ডাকটর বললেন কপাল ভালো থাকলে হাতি ও চিতা দেখতে পাবেন। রাস্তার ধারে মাঝে মাঝে নানা রকম বাঁদর তাদের পরিবার নিয়ে। আরও কিছুটা এগোতে দেখলাম অনেক হনুমান রাস্তা আটকে বসে আছে। ড্রাইভার হর্ন দিলো। কোনো কিছুই যেন তারা গ্রাহ্য করলো না। আস্তে আস্তে দু একটি এগিয়ে এলো বাসের দিকে। সব দেখেশুনে যা বুঝলাম তাদের টোল ট্যাক্স দিতে হবে। ড্রাইভার জানালা থেকে কিছু বিস্কুট ছুড়ে ছুড়ে দিলো। দুদিকে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, ওরা সরে গিয়ে রাস্তা করেদিল বাস যাবার জন্য। আটকে দিলো বাইকের আরোহীদের। আমাদের বাস এবার একটু গতি নিলো।
মসৃন রাস্তায় ছুটে চললো বাস.পথের দুধারে নানা নির্দেশ কোথায় বাঁক আছে, কোথায় কত গতি (Speed Limit).হর্ন বাজানো যাবে না।দুপাশে পাহাড় আর ঘন জঙ্গল। অপূর্ব সে যাত্রা। বাসের আওয়াজ ছাড়া পুরো বাস নিস্তব্ধ। সবাই দুচোখ ভোরে সেই প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করছে। হটাৎ অনেক দূর থেকে বাঘের আওয়াজ ভেসে উঠলো। তীব্র ও স্পষ্ট সে আওয়াজ পাহাড়ে প্রতিধ্বনি হলো। নিস্তব্ধতা ভাঙলো সবার।
বাঙালি মহারাজ বলে উঠলেন সোমনাথের পর শিবজী এই শ্রীশৈলে বাস করেন পুত্র কার্তিকেয়র জন্য। গনেশের কাছে বিস্বদর্শনে হেরে যাবার পর শিব কার্তিকে পাঠান দক্ষিণে অসুর দমনে। দেবসেনাপতি একটানা বাইরে থাকার জন্য উতলা পিতা মাতা তাকে দেখতে আসেন। এবং এই পর্বতে তাদের দর্শন হয়। শিব বলেন এই পাহাড়ে থাকবে তার দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ। বললাম মহারাজ, শিব পুরান বা অন্যান্য পুরান পড়ে আমার যা মনে হয়েছে এক বিরাট রূপকের আড়ালে সত্যকে যেন ঢেকে দেওয়া হয়েছে। আমি বিদেশিদের উপাধি দেওয়া হিন্দুধর্মর কথা বলছি না। আমাদের ভারতীয় সনাতন ধর্মর যে বিশাল বিজ্ঞান তা যেন কেউ রূপকের এক কঠিন আস্তরণের আড়ালে ঢেকে দিলো। কোথাও যেন ধর্মের নাম করে ছড়িয়ে দেওয়া হলো কিছু সুন্দর সুন্দর গল্প কে। আর তাকে যে যেভাবে ভাবে সেভাবে বুঝবে। শুধু প্রকৃত জ্ঞানীরাই জানবেন সেই বিজ্ঞানকে। মহারাজ শুনলেন, মুখে একটা হাসি। একটু চুপ করে রইলেন । বাস ছুটে চলল। আসতে আসতে ঘাট রোড শুরু হলো।
পাহাড়ি পথকে "ঘাট রোড" কথাটা দক্ষিণ ভারতে বেশি শোনা যায়। পাকদন্ডী বেয়ে কখনো চড়াই কখনো উৎরাই বাস চলতে লাগলো। গতি এখন বেশ কম। বেলা প্রায় দুটো। অনেকটাই সময় হয়ে গেছে। একটু চায়ের টান অনুভব করছি। কিন্তু বাস তো আর থামবে না। মহারাজ এর কথায় জানালা থেকে মুখ ঘোরালাম।
মহারাজ বললেন আলেক্সান্ডারের ভারত আক্রমণ প্রথম বিদেশী আক্রমণ হিসাবে দেখা হয়। এখনো অবধি ঐতিহাসিকরা তাই বলে থাকেন। এই ঘটনা খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ অথবা ৩২৭ অব্দে। ভারতবর্ষে এর খুব বেশি প্রামাণ্য দলিল পাওয়া যায়না। গ্রিকরা যতটা লিখে গেছেন, বা অন্য বিদেশী পর্যটকরা যতটা লিখেছেন। আর পরবর্তীতে ইংরেজদের ঐতিহাসিকরা যেভাবে লিখেছেন। এসব থেকে যতটা জানতে পারি সুদূর গ্রিস থেকে ভারতবর্ষ শাসন করার এক বিরাট অভিপ্রায় তার ছিল না। তিনি মূলত পারস্য আক্রমণ করে তাদের পরাজিত করে শাসন কায়েম করতে চেয়েছিলেন এবং ভারত থেকে নিয়ে যাবার কথা ছিল সেই অনন্ত জ্ঞান যা তার গুরু সক্রেটিস তাকে ইন্দাস (Indus) থেকে আনতে বলেছিলেন। রাজা পুরুষোত্তম বা পুরুর কাছে তিনি হেরে গেছিলেন না পুরুই পরাজিত হয়েছিলেন এই নিয়েও অনেক দ্বিমত আছে। তবে গুরু সক্রেটিস তাকে বারবার বলেছিলেন ইন্দাস হলো এমন জায়গা যেখানে অনেক জ্ঞানী আছেন যারা সৃষ্টি রহস্য জানেন, তুমি সেই জ্ঞানীদের কাছ থেকে সেই পদ্ধতি জেনে এস।
আলেক্সান্ডার গুরুর কথা মান্য করতে যা যা করণীয় করেছিলেন। এখানকার এক তৎকালীন ঋষিতুল্য যোগীর কাছ থেকে জানেন নানা কিছু। যাওয়ার সময় বন্দি করে নিয়ে যান কিছু যোগীকেও। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। আলেক্সান্ডার পথেই দেহ রাখেন।
আমার মনে হয় এই ইন্দাস বা ইন্দু থেকে পরবর্তী হিন্দু কথাটি এসেছে অথবা মধ্য এশিয়াতে বিশেষত আফগানিস্তান যা গান্ধার ছিল এবং পারস্য যা বর্তমান ইরান এখানে ভারতের চন্দ্রবংশীয়দের এক বিরাট অংশ সরে যায় সূর্য বংশীয়দের কাছে পরাজিত হয়ে। এরা ই উচ্চারণ করতে পারতো না হ উচ্চারণ করতো সেই ভাবে ও ইন্দাস বা ইন্দু হিন্দু হয়ে থাকতে পারে। এসম্বন্ধে মহা মহোপাধ্যায় গোপীনাথ কবিরাজ মহাশয় অনেক বিস্তারিত কাজ করেছেন। কিন্তু তার বেশিরভাগ কাজই আজ আর পাওয়া যায় না। আর একদল বলেন হিমালয় ও ইন্দু সাগরের মধ্যের অঞ্চলের বসবাস করেন যারা তারা হিন্দু।
জিজ্ঞাসা করলাম মহারাজ আপনি কি ইতিহাসের ছাত্র। বললেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও পরে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি থেকে এনসিয়েন্ট হিস্ট্রি নিয়ে পড়াশনা করেছেন। পন্ডিত গোপীনাথ কবিরাজের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয় ও ছিল। আমার সামনে যেন আর এক বিরাট জগৎ খুলে গেলো। মনটা আরও জানার ইচ্ছায় অস্থির হয়ে উঠল।
পন্ডিত গোপীনাথ কবিরাজ। নামটি শুনলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। এক বিরাট মাপের মানুষ। ছোট বেলায় প্রথম নাম শুনি বাবার কাছে, তখন কোনো লেখা পড়িনি। প্রথম পড়া ক্লাস সেভেন অশোকবাবু আমার স্কুলের লাইব্রেরিয়ান উনি একদিন বললেন তুই রোজ টিফিন টাইম হলে চলে আসবি ভালো বই দেব। সেযেন এক আশীর্বাদ হয়ে এসেছিলো আমার জীবনে। তার হাত থেকে প্রথম পাওয়া জ্ঞানগঞ্জ। সেই জানলাম গোপীনাথ কবিরাজ মশাইকে। তারপর দিলেন তপোভূমি নর্মদা। এসব ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে গেলো নর্মদা সিদ্ধ গৃহী যোগী বেদজ্ঞ শৈলেন্দ্র নারায়ণ ঘোষাল শাস্ত্রীর লেখা তপোভূমি নর্মদাতে উনি বলছেন এরিস্টটল হলেন আলেক্সান্ডার এর গুরু। এরিস্টটল তার শিষ্যকে বলেছেন ভারত বর্ষের থেকে জ্ঞান আনার জন্য। বিখ্যাত Indologist পন্ডিত গোপীনাথ কবিরাজ বলছেন স আর হ উচ্চারণ গত সমস্যা। একারনে সিন্ধু হলো হিন্দু তাহলে মহারাজ কি বললেন? যদিও চন্দ্রবংশীয়দের পারস্যের দিকে সরে যাওয়াটা ঠিক আছে। এনিয়ে আর কথা বাড়ালাম না মহারাজের সাথে। শুধু বললাম আপনার থেকে কবিরাজ মশাই-এর ব্যাপারে জানতে চাইবো। উনি সম্মতি জানালেন। বললেন কাশী তে এলে মঠে এস।
এসব ভাবতে ভাবতে চলে এলাম কৃষ্ণা নদীর তীরে শ্রীশৈলম ড্যাম এর কাছে। একটা নিচু লোহার ব্রিজ আর একটা অনেকটা উঁচু সিমেন্টের। সিমেন্টের ব্রিজ দিয়ে বাস এগোলো আবার পাহাড়ি রাস্তা। এবার ঢুকে পড়লাম এক জনপদে। একটু এগোতে লেখা আছে হেলিকপ্টার সার্ভিস। বাস এগিয়ে চললো।
তিনটে বাজে। দুটি পরিবার কিছুটা এগোনোর পর নেমে গেলো। চারদিকে নানা বোর্ড। বুঝলাম শ্রীশৈলম পৌঁছে গেছি।
দেখলাম এক জায়গায় লেখা আছে শ্রীশৈলম টেম্পল ৫কিমি। আরও এগোতে দেখলাম সাক্ষী গণপতি মন্দির। বাস থেকেই প্রণাম করলাম। বাস এগিয়ে চললো গন্তব্যের দিকে। ডানদিকে পেলাম আদি শঙ্করাচার্যের মূর্তি। বুঝলাম এটিই ফলধারা পঞ্চধারা। আরও খানিকটা এগোনোর পরে এলাম শ্রীশৈলম বাস স্ট্যান্ড। ঘড়ি দেখলাম বাজে সাড়ে তিনটে। আট ঘন্টায় এসে পৌছালাম শ্রীশৈলম।
বাসস্ট্যান্ডের ঢোকার আগেই যে চারমাথার মোড় সেখানে একটি মন্দিরের গোপুরনের মতো। চারদিকে নন্দী মহারাজ । বামদিকে মন্দির যাওয়ার পথ। সোজা গেলে কৃষ্ণা নদী। আর ডানদিকে বাসস্ট্যান্ড। নানা নির্মাণ এর কাজ চলছে বাসস্ট্যান্ড ছাড়িয়ে এগোলেই।
মহারাজ কে জিজ্ঞেস করলাম আপনারা কোথায় থাকবেন? বললেন গঙ্গা সদন। আগে থেকে ওনাদের বুক করা আছে। বাসস্ট্যান্ডে একজন ওনাদের নিতে এসেছেন। আমার তো কোনো ঠিক করা নেই। আর এখানে কোনো হোটেলও নেই। এই দেবস্থানামের করা গেস্ট হাউসই ভরসা। তাই তাদের অফিসে গেলাম। প্রথমেই সেখানে হোঁচট খেলাম।
একা মানুষকে ওরা কোনো ঘর দেয় না। দোকা কোথায় পাবো? এসেছি একা যেতেও হবে তো একা। জন্মতে একটা সুতো নিয়েও আসিনি যাবার সময়ও একটি সুতোও নিয়ে যাবোনা। হাসতে হাসতে বললাম রিসেপশনে থাকা মানুষটিকে। বললো আগে থেকে বুক করা থাকলে তবেই পাওয়া যাবে একা হলে। আর সন্ন্যাসীদের জন্য ছাড় আছে। মনে মনে ভাবলাম এই জন্য থ্রীইডিয়টস সিনেমায় আমির খান বললো সব জায়গায় ঢোকা যায় যদি সঠিক ইউনিফর্ম থাকে। মনে পড়ে গেলো বাঙালি পরিব্রাজকের অগ্রজ উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কথা। তিনি তো প্রথমবার থেকে এ হিমালয় ভ্রমণে ঋষিকেশ কালিকমলি ধর্মশালা থেকে গায়ে জড়িয়ে নিতেন গৈরিক। ব্যাগে তার থাকতো সেই পোশাক। আর ওই পরেই চলতেন ওপথে। সমগ্র ভ্রমণ শেষ হলে আবার ঋষিকেশে এসে নিজের পোশাক। তিনিতো সন্ন্যাসী ছিলেন না। আমার তো সঙ্গে নেই এমন ইউনিফর্ম। কি করি ? অনেক অনুনয় বিনয়ের পরও রিসেপশনে বসা মানুষটি ও তার উপরওয়ালা বললো হবে না।