top of page
Writer's pictureSadhguru

রহস্যময় শ্রীশৈলম

Aবং হলো ১৯৮০ সাল থেকে তার সাধনার জীবনের নানা কাহিনীকে তুলে ধরা। পূর্ব জীবনকে জানার জন্য অবধূত নানা কাজের সূত্রেও সেই সব জায়গায় ঘুরে বেড়ালেন সঙ্গে মিলিয়ে নিলেন নিজের জীবনের ছন্দকে।  অবধূতের জীবনের নানা ঘটনাকে তুলে ধরা হবে এই Aবং বিভাগে। তাঁর শ্রীশৈলম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এখানে দেওয়া হলো পর্বে পর্বে। আজকে প্রথম পর্ব। 




গৌরচন্দ্রিকা

আমার প্রথম জ্যোতির্লিঙ্গ ভ্রমন শ্রীশৈল বা শ্রীশৈলম। কিন্তু কখনো শ্রীশৈলম যে এতো রহস্যে মোড়া হবে আমার কাছে তা বুঝিনি।

 

আমার স্বল্প বুদ্ধিতে যেটুকু বুঝেছি জ্যোতির্লিঙ্গ নির্দিষ্ট করার ব্যাপারে নানা মত আছে। সেই বিতর্কের মধ্যে আমি ঢুকছিনা। নানা পৌরাণিক লেখায় অনেক জায়গায় বলা আছে সারা পৃথিবীতে ৬৪টি জ্যোতির্লিঙ্গ ছড়িয়ে আছে। কিন্তু তার নির্দিষ্ট স্থান যথাযথ ভাবে ব্যাখ্যা করা নেই। সমগ্র ভারতবর্ষে অনেক সয়ম্ভূ লিঙ্গ আছে তাদের মধ্যে ১২টি কে জ্যোতির্লিঙ্গ বলা হয়েছে। এই ব্যাপারেও কিছু সিদ্ধ যোগীর কাছে যাওয়া ও আলোচনার সূত্রে যেটা বুঝেছি এই মন্দির গুলির সবই বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থান বিন্দুতে আছে যেগুলো এক একটি এনার্জি সেন্টার। যাকগে এসব তত্ব কথা। একজন বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে আমার বারবার যে চেষ্টা তা হলো ভারতীয় যোগ কে ধর্মের আধারে না দেখে বিজ্ঞানের দৃষ্টি তে দেখা এবং সেটা কে এক্সপেরিয়েন্স করা।


শিবপুরান বলছে –

"সৌরাষ্ট্রে সোমনাথং চ শ্রীশৈলে মল্লিকার্জুনম্।"

 

এখন আমার জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন প্রথম জ্যোতির্লিঙ্গ সোমনাথে না গিয়ে দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ শ্রীশৈল বা শ্রীশৈলম দিয়ে শুরু হলো।

 

শাস্ত্রে আছে "श्रीशैल शिखर दृष्ट्वा पुनः जन्म न विद्यते ।" অর্থাৎ শ্রীশৈল র শিখর দেখলে আর পুনর্জন্ম হবে না। মানে জন্ম মৃত্যুর এই কালচক্র থেকে মুক্তি। আমিও এই বিশ্বাস নিয়ে চললাম শ্রীশৈলমের পথে।

 

আমার যাত্রা শুরু হলো কলকাতা থেকে। গুরুদেবকে স্মরণ করে বেরোলাম এক পরিব্রাজকের জীবনে। যাওয়ার দিন ঠিক থাকলেও ফেরার কোনো তাড়া ছিলনা। কারণ এই চলায় আমি শুধু জ্যোতির্লিঙ্গ কে দর্শন করতে যেতে চাই নি সঙ্গে আমার এই ভারতের অনেক অজানাকে দেখতে ও জানতে বেরিয়ে ছিলাম।


সব দিক থেকে বৈচিত্রময় এই ভারতভূমি কে জানতে ও চিনতে গেলে আমার মনে হয়েছে পরিব্রাজন ছাড়া গতি নেই।

নানা যুগে নানা সময়ে ভারতে অনেক পরিব্রাজক যেমন বিদেশ থেকে এসেছেন তেমনি এই ভারতের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ বেরিয়ে পড়েছেন পরিব্রাজনের জন্য।

 

অনেক মানুষ নানা সময় বেরিয়েছেন পরিব্রাজকের ভূমিকায়। এমনি প্রথম মুদ্রিত বাংলা গ্রন্থ পাই প্রায় ১৬০বছর আগের। লেখক শ্রী যদুনাথ সর্বাধিকারী। এর পরবর্তীতে এমন উল্লেখযোগ্য নাম উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কালিকানন্দ অবধূত, প্রমোদ কুমার চট্টোপাধ্যায়, প্রবোধ কুমার সান্যাল, জানা ও অজানা আর বহু মানুষ। কেউ লিখছেন কেউ বা লেখেননি। আমিও সেই পরম্পরার আর এক সংযোজন।


আসলে সব দিক থেকে বৈচিত্রময় এই ভারতভূমি কে জানতে ও চিনতে গেলে আমার মনে হয়েছে পরিব্রাজন ছাড়া গতি নেই।

 

এই কারণেই ঠিক করেছিলাম যতটা মাটির কাছাকাছি থাকা যায়। হাওড়া থেকে ফলকনামা এক্সপ্রেসে সকালে নির্দিষ্ট দিনে চড়ে বসলাম। স্লিপার ক্লাসের টিকিট। স্লিপার ক্লাসের টিকিটের কারণ নানা রকম মানুষের সাথে মেশা যায়।

 

এসি কামরা আরামপ্রদ হলেও কেমন যেন মর্গের মতো। সাদা চাদরে ঢেকে সব মানুষ শুয়ে আছে। কথাবলা বা আলাপ পরিচয়ের সম্ভাবনা খুব কম। এমনিতে শীতকাল, নভেম্বর মাস। কলকাতায় একটু ঠান্ডা পড়েছে। ট্রেনের জানালা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া আসছে। দেখতে দেখতে প্রায় সারাটা দিন চলে গেলো। পরের দিন প্রায় ১০টা নাগাদ সেকান্দ্রাবাদ স্টেশনে পৌছালাম। পৌঁছে থাকার জায়গা ঠিক করার তাড়া। পূর্ব পরিচিত জায়গা ইন্দিরা পার্কের উল্টোদিকে হায়দ্রাবাদ বাঙালী সমিতির অফিসে এলাম।

 

বহু বছর পর গেলাম, তাই অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নামমাত্র ভাড়ায় একটি ঘর জুটলো। সঙ্গের ঝোলা রেখে নিচে নেমে একটু চা খেলাম। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে লিখে ফেললাম আমার ছোট্ট নোটবুকে কিছু জরুরি তথ্য রাস্তায় নানা মানুষের সাথে।


আলোচনার স্মৃতি। যা যা দেখলাম সবই নিজের মতো করে টুকে রাখা। খানিকক্ষণ বিশ্ৰাম নিয়ে উঠে পড়লাম বাসের টিকিট কাটতে।

 

মোবাইল নিয়ে বসে গেলাম পরদিনের বাস এর টিকিট বুকিং এর জন্য। দেখলাম MG বাস ট্যার্মিনাস থেকে বাস আছে শ্রীশৈলাম অবধি। সুপার লাক্সারি নন এসি বাস। ভোর বেলা থেকে বাস আছে। আমি যে বাসে টিকিট পেলাম তা বেলা সাড়ে আটটার সময়।

 

সেদিনটা এদিক ও দিকে ঘুরে কেটে গেলো। পরের দিন সকাল সকাল উঠে রেডি। আটটার মধ্যে পৌঁছে গেলাম বাসস্ট্যান্ড। ইনফরমেশন কাউন্টারে খোঁজ নিতে ওরা বলেদিলো কত নম্বর প্লাটফর্মে বাস আসবে। অবাক হলেন প্লাটফর্ম লিখলাম বলে। না হায়দরাবাদে ওরা বাস টার্মিনাসে প্লাটফর্মের মতো করে রেখেছে যদিও সেগুলো নিচু। আর একে ওরা প্লাটফর্ম বলে। বিরাট বাস ট্যার্মিনাস। অনেক বাস দাঁড়িয়ে। কিছুক্ষন পরে ঘোষণা হলো তেলেগু ও হিন্দি তে। দেখলাম একটি লড়ঝড়ে বাস এসে দাঁড়ালো।

 

টিকিটে লেখা আছে সুপার লাক্সারি বাস কিন্তু দেখে মনে হলো মুড়ির টিন। অনেকটা আমাদের এখানে মিনিবাসের মতো। অল্প সিট। আকারে ছোট মিনিবাসের চেয়ে। তাতেই জানলার ধারে বুক করা নির্দিষ্ট সিটে বসলাম। কন্ডাক্টর কে জিজ্ঞেস করলাম কতক্ষন লাগবে বললো, পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা লাগবে। MG Bus Terminus থেকে বাস ছাড়লো ঠিক সময়ে।


আমার যাবার সময় জগদ্ধাত্রী পুজো ছিল। গোটা বাসে প্রায় সব সিটই ভর্তি। দুটি পরিবার ছাড়া কিছু স্থানীয় মানুষ আর বাকিরা একা। এই বাকি লোকের মধ্যে জনা পনেরো সন্ন্যাসী। তাদের গেরুয়া পোশাক। দুজন মানুষ সাধু গোছের তাদের অবশ্য সাদা পোশাক ধুতি ও ফতুয়া। গায়ে চাদর। সবে মিলে ২৫জন। আমার পাশের সিটে যিনি এসে বসলেন তিনি ওই সন্ন্যাসীদের মধ্যে একজন। ওনাদের একটি দল যাচ্ছেন শ্রীশৈলম।


বাস ছাড়ার পর দেখলাম দেখতে যতটা লড়ঝড়ে কিন্তু ভেতর বসে কোনো সমস্যা নেই। বেশ আরামদায়ক । একটু চলার পর পাশের মানুষটিকে ভালো করে দেখে বুঝলাম উত্তরভারতীয়। তাই নমস্কার করে নমঃ নারায়ণ বলতে প্রত্যুত্তর এল নমঃ নারায়ণ। হিন্দিতে জিজ্ঞাসা করলেন কোথা থেকে আসছি। বললাম কলকাতা থেকে, শ্রীশৈল যাবো। উনি জানালেন ওনারা বারাণসী থেকে আসছেন। বারাণসী আমার এর পরের গন্তুব্য তাই ভাবলাম একটু আলাপ জমাই কিছু জানা যাবে বারাণসীর ব্যাপারে। আর সাধুসঙ্গও হবে। মানুষটি বেশ চুপচাপ । তাই বেশী কথা বলা গেল না। কেমন একটু বিভোর হয়ে আছেন। বাস বেশ ধীরে এগোচ্ছে। রবিবার হলেও ট্রাফিক এর চাপ বেশ আছে । ক্রমে শহরের গন্ডি পেরিয়ে এয়ারপোর্টের রাস্তায় বাস পড়লো । এটা একটা বড় বাইপাস। অনেক চওড়া রাস্তা তাই এবার বাসেরও চলার গতি বাড়ল। পিঠের ঝোলা থেকে নোটবই বের করে লিখতে শুরু করলাম। যা যা দেখছি। শামসাবাদ এয়ারপোর্ট ক্রস করে একটু এগোতে দেখলাম দুপাশে ছোটো ছোটো ন্যাড়া টিলা। খুব রুক্ষ লাল পাথুরে জায়গা। মাঝে মাঝে কিছু ঝোপঝাড়।


কালো সর্পিল রাস্তা যেন পাথুরে জমির উপর একটা ফিতের মতো লাগিয়ে দিয়েছে। অপূর্ব লাগছিলো। তেমনি মসৃন রাস্তা । বাসও চলছিল বেশ দ্রুত। একটু পরে বাস গিয়ে থামলো একটা ছোট বাস টার্মিনালে। বুঝলাম ওখানকার কোনো বড় গ্রাম এটা। বা আমাদের মতো মফস্বল শহর। লেখা পুরো তেলেগু তে। তাই পড়া সম্ভব হলো না। ড্রাইভার ও কন্ডাক্টর দুজনেই নেমে গেলেন। বুঝলাম একটু বেশি সময় অপেক্ষা করবে বাস। সবাই নামতে শুরু করলো। সন্ন্যাসীদের ও নামতে দেখলাম। আমিও চা খাবার জন্য নামলাম। দেখলাম একটি ছোট ছেলে ঝুড়ি মাথায় বলছে সমসে সমসে । উঁকি মেরে দেখলাম ছোট সিঙ্গাড়া । দশ টাকায় দশটা। এগুলো পেঁয়াজের সামসা। ট্রেনে আগে পেয়েছি। সঙ্গে তেলে হালকা ভাজা লঙ্কা। নিলাম খিদেও পেয়েছে অল্প। সকাল তাড়াহুড়োতে ব্রেকফাস্ট করা হইনি। আর তাছাড়া ট্রেন বা দূরপাল্লার বাসে উঠলেই আমার কেমন খিদে খিদে পায়। ওই চ্যাপ্টা ছোট সিঙ্গাড়া খেলাম । বাস ছাড়তে দেরি আছে। কাছে একটি দোকানে চা বললাম । হায়দরাবাদ ও অন্ধ্রপ্রদেশে চা বেশ ঘন দুধের বানায়। অনেকক্ষণ ধূম্রসাধন ও হয়নি। তাই চা সহযোগে সিগারেট ধরালাম। বাকি দেখছি নানা জায়গা থেকে বাস আসছে আবার ছাড়ছে। লোকজনের কোলাহল।


এসব আমার নতুন জায়গায় গেলে বেশ ভালো লাগে। একটু অন্যমনস্কও হয়ে পড়েছিলাম এসব দেখতে দেখতে। একটু আগুন হবে। বাংলায় কথা শুনে সম্বিৎ এলো। দেখলাম ওই সন্যাসীদের মধ্যে একজন। দেশলাইটা দিলাম ওনাকে। একটু অবাক চোখে তাকিয়ে আছি দেখে হেসে বললেন আমার পাশের মানুষ টি ওনাকে বলেছেন আমি বাঙালি তাই বাংলায় বললেন। পূর্বাশ্রম ওনার বাংলায় ছিল। আলাপ হয়ে ভালো লাগলো। ড্রাইভার বাসে উঠে পড়েছে। হর্ন দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম বাসে।

 

এগিয়ে চললাম। সুন্দর রাস্তা। বাস বেশ জোরেই চললো। এভাবে ঘন্টা খানেক চলার পর আমার পাশের মানুষটি উঠে গেলেন ওদের বাকি সাথীদের কাছে। তারপর ওই বাঙালি সন্ন্যাসীকে কিছু বললেন। উনি এসে বসলেন আমার পাশের সিটে। বাসে এই পুরো দলটিকে খুব ভালো করে দেখছিলাম কেমন প্রশান্ত দৃষ্টি। নিজেদের মধ্যে সামান্য কিছু কথা বলছেন।

 

রাস্তার দুপাশে রুক্ষ। গাড়ির পরিমান ক্রমে কমে এলো। দেখলাম বেশ কিছু বুলেট বাইক তাতে দুজন করে অল্পবয়ই ছেলে হেলমেটে Go-Pro ক্যামেরা, বাইকের পিছনে ও একই ক্যামেরা লাগানো। প্রায় ২০জন। সারিবদ্ধ ভাবে যাচ্ছে। একটি ছেলের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ড দেখে বুঝলাম ওরা বাইকার এমন ভাবে নানা জায়গায় দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। ওদেরও গন্ত্যব্য একই।


সাড়ে বারোটা নাগাদ বাস এসে থামলো একটি জায়গায় যেখানে লাঞ্চ ব্রেক দেওয়া হবে। মাঝে কিছুটা রাস্তা বেশ খারাপ ছিল। তাই অনেকটা দেরিতে এ পৌছালাম দুপুরের খাবার জায়গায়।

 

এটা একটি ধাবা। ভাত রুটি দুটো ব্যবস্থা আছে। সবাই খেতে নামলাম। আমি আর ওই বাঙালি সন্যাসী একই জায়গায় বসলাম। বসার কারন হলো যদি কিছু জানা যায়। আধ্যাত্মিক জগতের কথা যতটা জানা সম্ভব। এযেন এক নেশার মতো।


যত জানতে পারি তত মনে হয় আরও কত জিনিস জানার আছে। ভাতের থালির অর্ডার দিলাম। উনিও তাই দিলেন। বাকি সন্ন্যাসীদেরও তাই।


পরের পর্বে....


Share this Page

Subscribe

Get weekly updates on the latest blogs via newsletters right in your mailbox.

Thanks for submitting!

bottom of page