গুরু গোরক্ষনাথ এবং পৃথ্বী নারায়ণ শাহ
১৯৮০ সাল থেকে নিরন্তর সাধনা করে অবধূত শেষ করলো এক দুরূহ এবং দুর্গমতম সাধনা। নেপাল রাজপরিবারের ওপর দেওয়া গুরু গোরক্ষনাথের অভিশাপ প্রত্যাহার করতে পারলো অবধূত। গতকাল রাত ২:৩৫ মিনিটে প্রত্যাহৃত হলো সেই অভিশাপ। ১৯৮০ সালে অবধূত তার গুরু অবধূত আত্মানন্দ (যিনি তাঁর পিতা) তার কাছে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ ছিল ৪৪বছর নিরন্তর সাধনার মধ্যে দিয়ে এই অভিশাপ প্রত্যাহার করবেন। গতকাল রাত্রে তাই ঘটলো।
রাজা পৃথ্বী নারায়ণ শাহ এবং গুরু গোরক্ষনাথের মধ্যে একটি যোগসূত্র হয়েছিল।গুরু গোরক্ষনাথ একজন দেবতুল্য ব্যক্তিত্ব। কিংবদন্তি অনুসারে, শিশু শাহ একবার জঙ্গলে তার গুহার কাছে গিয়েছিলেন। সেখানেই গুরু গোরক্ষনাথের সাথে দেখা হয়েছিল। গোরক্ষনাথ তাকে কিছু দই আনতে বললেন। শাহ তখন দৌড়ে তার প্রাসাদে গিয়ে তার মাকে সব খুলে বলল। তার মা শাহের হাতে দই দিলেন এবং তাকে বলেছিলেন যে ওই দেবতুল্য মানুষটি যা বলেন তাই অনুসরণ করতে।
তদনুসারে, শাহ একই স্থানে গিয়েছিলেন যেখানে তিনি গোরক্ষনাথের সাথে দেখা করেছিলেন। গুরু গোরক্ষনাথ শাহের আনা দইটি রেখে দেন এবং তার হাতে দিয়ে পুনরায় তা শাহকে খেতে বলেন। পৃথ্বী নারায়ণ শাহ ভুলে যান তার মায়ের কথা এবং এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, দইটি তার পায়ের আঙ্গুল দিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। গোরক্ষনাথ তখন শাহকে বললেন যে তিনি যেখানেই পা দেবেন তার প্রতিটি ভূমি তিনি জয় করবেন। কিন্তু এরই সঙ্গে ক্ষুব্ধ গোরক্ষনাথ দই মাটিতে ফেলার কারণে পৃথ্বী নারায়ণ শাহকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে তার রাজবংশ মাত্র দশ প্রজন্ম শাসন করবে। এরপর এই রাজবংশ ধ্বংস হয়ে যাবে।
এই অবধি ঘটনা সবার জানা যা লোক মুখে আজও ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু এর পরের ঘটনা সবার জানা নয়। কি ছিল সেই ঘটনা? পৃথ্বী নারায়ণ শাহ ভারাক্রান্ত মনে ফায়ার আসেন প্রাসাদে। তাঁর মা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন সেই মহাযোগী কি বললো? পৃথ্বী নারায়ণ শাহ তাঁর মাকে সব খুলে বললেন। তখনি পৃথ্বী নারায়ণ শাহকে নিয়ে রাজমাতা ছুটলেন সেই মহাযোগীর কাছে। মহাযোগীর পায়ের ওপর লুটিয়ে পড়ে ক্ষমা চাইলেন এবং এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হবার উপায় জানতে চাইলেন। উপায় দিয়েছিলেন মহাযোগী গুরু গোরক্ষনাথ। আর সেই উপায়ের মধ্যেই বলা ছিল এক দুরূহ রহস্য।
অবধূত অদ্বৈতানন্দ তাঁর পিতা অবধূত আত্মানন্দর থেকে এই রহস্য জানতে পারেন। এবং এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করার শপথ নেন। তখন অবধূত অদ্বৈতানন্দর বয়স হলো ৮ বছর। সালটা ১৯৮০। তারপর থেকে গুরুর কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অবধূত এই সাধনা শেষ করে মুক্ত করলেন নেপাল রাজ্পরিবারকে।
এই চুয়াল্লিশ বছরের দুর্গমতম সাধনায় যে বা যাঁরা অবধূতকে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য একান্ত ভাবে সাহায্য় করেছিলেন তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞতা রইলো শ্রীমতি গীতা তীর্থনাথের কাছে। সাধনার অন্তিম পর্যায় প্রয়োজনীয় দান দিয়ে মুক্ত করলেন ওই পরিবারকে। শেষ করলেন অবধূত তাঁর গুরু তাঁর পিতার কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতির।