নয়না দেবীতে কিছুদিন ছিলাম। সেই খানে এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসীর সাথে প্রতিদিন কিছুটা সময় কাটাবার সুযোগ হয়েছিল। মহাত্মার কাছে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসতেন প্রবচন শুনতে। এমনি একদিন আমিও গেছি। আসলে সন্ন্যাসীর একটা আলাদা আকর্ষণ ছিল। কি যেন তার প্রতি আমাকে টানতো। একটা অয়স্কান্ত মণি যেন উনি। আজ খবর পেলাম সেই মহাত্মা তাঁর স্থুল দেহ ছেড়ে শিবধামে যাত্রা করেছেন। খবর পাওয়ার পর মনটা বিষন্ন হয়ে গেল। একদিন প্রবচনে একটা গল্প বললেন । অন্য দিন বলেন গীতা থেকে বা নানা শাস্ত্র থেকে। কিন্তু সেদিন বললেন গল্প। সেই গল্পটি দিয়েই তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।
মহাত্মার বলার একটা নিজস্বতা ছিল তা অননুকরণীয়। তা এখানে লিখে বোধকরি আনতে পারবো না।
উনি বলতে শুরু করলেন প্রতিদিনের মত জয় শিবসম্ভু বলে। অনেকদিন আগে তা ধর তখন আংরেজ রাজত্ব করছে। তখনো স্বদেশী আন্দোলন সেভাবে এদিকে আসেনি। ওহী দো'শ সাল পাহেলে।
উপস্থিত সবাই বলল সেতো অনেক দিনের কথা। সন্ন্যাসী মাথা নেড়ে বললেন হা। কিন্তু জায়গাটি এটাই ছিল। এই কুঠিতে। আসলে তখন এটা একটা গুরুকুল ছিল। ঘন জঙ্গলে ঢাকা ছিল এই জায়গা। হিংস্র পশুরা ও ছিল। সিদ্ধ শক্তিপীঠ এই জায়গা। তাই এখানে অনেক ধরণের মহাত্মা থেকে সন্ন্যাসী, তান্ত্রিক, কাপালিক সব আসত। আমার পরম গুরুদেব সেই কালের একজন অত্যন্ত উচ্চ কোটির সাধক ছিলেন। বহু সাধক তখন ওনার কাছে শাস্ত্র ব্যাখ্যা ও চর্চা করতে আসতো।
বিদ্যার্থী ও শিষ্যরা আসতো নানান জায়গা থেকে। আমার পরম গুরুজী এই গুরুকুল পেয়েছিলেন ওনার গুরুর কাছ থেকে তাঁর দেহান্তের পর।
উপস্থিত সবাই বুঝলো এই স্থান, এই কুঠি অনেক প্রাচীন। সবাই বেশ বিস্ময় প্রকাশ করল।
মহাত্মা বলতে লাগলেন সে সময় এখানে প্রায় ত্রিশ জন বিদ্যার্থী ওনার শিষ্য ছিল। তার মধ্যে বেশ কয়েকজন বিদ্যার্থী সাধনা এবং শাস্ত্র রহস্যকে জানার বা বোঝার চেয়েও যে কারণে এসেছিল তা হল এখানে কি এমন আছে যার জন্য সবাই এত এই মহাত্মার কথা বলেন। এদের মধ্যে কয়েকজন আগে অন্য গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়েছে। আবার এখানে এসেছে। ভাব এমন যে এখানের তুল্য আর জায়গা নেই।
সারাক্ষণ আমার পরম গুরুদেবকে কিভাবে তুষ্ট করবে তার চেষ্টা করছে। ভাবছে আমি গুরুকে এত কিছু বলছি এত দেখাচ্ছি আমি তার জন্য সর্বদা আছি। ভক্তি ভাবে গদগদ। আমি নিশ্চই কিছু এমন পাবো যাতে আমি বাকি সবাইকে টপকে যাবো।
The message comes from the Universe during sadhana is a test for Sadhaks. Only true guru knows what is correct.
একজন এসেছিল সে প্রচুর শাস্ত্র, ব্যাকরণ, ও না না ভাষ্য নিয়ে যে টিকা তার সব কিছু পড়াশোনা করে। তার ভাব ছিল যে গুরু কি জানেন, আমি এর চেয়ে অনেক বেশি জানি। প্রায়ই সে নিজেকে গুরুর থেকে কোথায় কম সেই নিয়ে মনে মনে তুলনা করত। কিন্তু আমার পরম গুরু এমন মানুষ ছিলেন কাউকে কিছু বুঝতে দিতেন না। একদমই সদাশিব। সব জানলেও সব শিবজির ওপর ছেড়ে রাখতেন। বিচার বোধ দিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে কাউকে দেখতেন না। সে সর্বদা নিজের সাথে তুলনা করতে করতেই শেষ হয়ে যাচ্ছিলো এবং একটা সময় এলো যখন সে আর থাকতে পারলো না। কারণ একটি শিষ্য যে নিজেকে অতিরিক্ত চালাক ভাবত সে গুরুর আড়ালে বেশ কিছু শিষ্যকে প্রভাবিত করতো মিথ্যা বলে। আমার গুরুদেব বারবার বলতেন সাধনা যার যার নিজের নিজের। কিন্তু তাঁর কথা কেউ শুনতো না। নিত্যদিন নিজেদের মধ্যে আলোচনা চলত। কারণ অতিরিক্ত চালাক শিষ্যটি এই ছেলেটিকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবত। সে আর অনেককে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবত এবং যেন তেন প্রকারে গুরুকে কব্জায় আনতে চাইত।
এবার যে বাকিদের থেকে বেশি বেশি চালাক ভাবত তার কথায়। সবার কাছে বলত আমি তো ওঁকে গুরু হিসাবে দেখি না। কিছু শেখার যা দিয়ে আমি তা শিখতে এসেছি। মনে মনে ভাবত আমি গুরু হতে গেলে কি কি লাগবে শুধু এইটুকু জিনিস হলেই হবে। আর সকলের মাঝে গুরুনিন্দা করত। আর আড়ালে গুরুর কাছে খুব প্রিয় পাত্র হবার চেষ্টা করত। এমন ভাব দেখাত যেন কত কি উপলব্ধি হচ্ছে। আসলে সে কিছুই উপলব্ধি করতে পারে নি তার এই ভিতরের লোভের জন্য। শুধু গুরুবাক্যই আবার গুরুকে কিছুদিন পরে পরে বলছে। উনি বলছেন বাহ্ বেটা বহুত সুন্দর। তু তো পৌঁছা হুয়া আদমী। দেখ একদিন তু বড়া গুরু বনেগা" সে শুনে আরও উৎসাহিত হত। কিন্তু তার ভিতরের উদ্দেশ্য ছিল আলাদা। সে ভাবত গুরু হতে গেলে নিশ্চই কোনো বিশেষ কৌশল আছে সেটা যে ভাবেই হোক জানতে হবে। না হলে তো এমন গুরু আমি হতে পারবো না। এই বিদ্যার্থীও এমনই মূর্খ গুরু বাক্যকে ধরে চলতে পারে না। ওপর ওপর দেখায় সব ভেতরে বিশ্বাস করতে পারেনা। ভাবতেই পারে না আমার পরম গুরু এই মাপের সিদ্ধ সাধক। শুধু ভাবে কিছু একটা গুপ্ত রহস্য আছে যেটা উনি শুধু ওনার প্রিয় শিষ্যকেই দেবেন। দু চার দিন ছাড়া ছাড়া এই রকম কথোপকথন চলতো আপনার মধ্যেই আমি সব পাই দেখি। আপনি সব কিন্তু যেই বাকি সাধকদের সাথে থাকত তখন সে সন্দেহ পোষণ করত। এছাড়া গুরু প্রশংসায় তার মাথায় আরও গন্ডগোল হল সে নিজেকে এই আশ্রমের গুরুর পর দ্বিতীয় হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলো, কি সেই মরিয়া প্রত্যাশা। একবারও বুঝলো না গুরু কি বলে। কার কতটুকু এক্তিয়ার।
আমার পরম গুরু তাঁকে কিছু বুঝতে দিত না। কারণ উনি সেই কোটির মহাত্মা যাঁর দৃষ্টি অন্তর্ভেদী। সে চোখ বুজে কারো জন্য দৃষ্টি সঞ্চার করলেই বুঝে যান কে কি করছে। এটাও এক দুজন শিষ্য ছাড়া কেউ তা মানতে চাইত না। যে দু'চার জন ছিল গুরুকে সমর্পণ করে চলছিল তারা বিশেষ কারো সাথে মিশত না। আর আমার পরম গুরুদেব যখন বাইরে যেতেন নিজের সাধনার কাজে তখন এদের দৌরাত্ম আরও বাড়তো .
ফলে এই বিদ্যার্থী শিষ্য ভাবত ওনার এসব বোঝার ক্ষমতা কিছু নেই। সবটাই ভুল। যে দু একজন শিষ্য এটা বুঝেছিল তারা এতটাই সমর্পণ গুরুর কাছে করতে পেরেছিল তা তাদের গুরুস্বরূপ চিনিয়ে দিয়েছিল।
আর একজন ছিল সে বেদ, উপনিষদ বেদান্ত বেশ পড়ে নিয়ে গুরু যা বলতো তার সাথে মিলিয়ে দেখত ভুল বলছেন কিনা। উনি সব বুঝতেন কিন্তু কিছু বলতেন না। কিন্তু সঠিকটা পেলেও সে ঠিক সন্তুষ্ট হতে পারতো না। কারণ উনি ভুল বললে যে সে সন্তুষ্ট হবে। তাই ওপরে দেখালেও সে কত অনুগত শিষ্য ভেতরে কিন্তু সে সর্বদা ভুল খুঁজতে থাকতো .
এর মধ্যে যে বেদ উপনিষদ এসব পড়ে এসেছিল তাকে এখানে পাঠানো হয়েছিল অন্য গুরুকুল থেকে যাতে এই আশ্রমকে নষ্ট করা যায়। কারণ ওই কালে এখানে যত বিদ্যার্থী আসত তাদের একটা বড় অংশ নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছে যেত। অসম্পূর্ণ পড়া এবং জানা এই শিষ্যটির আরও দুজন বিদ্যার্থীকে এনেছিল। যাতে মনে হয় সে এই আশ্রমের হিতাকাঙ্ক্ষী। তার প্রতিটি বিদ্যার্থীকে যোগাযোগ করা তাদের নিত্য দিনের খোঁজ খবর নেওয়া বাকি আশ্রমিকদের বেশ মুগ্ধ করেছিল। অচিরেই সে সবার কাছে পৌঁছে যাবার নিরন্তর চেষ্টা করতো,
তারও উদ্দেশ্য একই, নিজেকে বিশাল প্রতিপন্ন করতে হবে। যে ভাবেই হোক, না হলে বাকিদের কাছে মান থাকে না। আশ্রমে অনেক অর্থ সাহায্য আসতো, সে কালে এই রাস্তা দিয়ে যে পথ ছিল তা দিয়ে অনেক ধনী ব্যবসায়ী যেত, তারা আমার পরম গুরুর আশ্রমে অর্থ সাহায্য দিত। সেই দেখে এক বিদ্যার্থীর আকাঙ্ক্ষা ও লোভ বাড়তে শুরু করলো। সে যখন ছুটিতে একবার বাড়ি গেছিলো তখন তার স্ত্রী জিজ্ঞেস করলো তুমি আমাকে ছেড়ে সন্তানকে ছেড়ে ওখানে পড়ে আছো কেন? তুমি তো শিশু বয়স থেকে গুরকুলে পড়াশোনা করেছ। যা জানো আর আমাদের যেটুকু আছে তাতে তো আমাদের ভালো ভাবেই চলে যায়। বিদ্যার্থী বলল তার স্ত্রীকে তুমি মূর্খ স্ত্রীলোক কিছুই বোঝোনা। আমাকে অনেক বড় গুরু হতে হবে। লক্ষ লক্ষ সুবর্ণ মুদ্রা আসবে। বিরাট গোশালা হবে। তুমি সেই সাম্রাজ্যের অধীশ্বরী হবে। তার স্ত্রী বলল আমি সত্যি মূর্খ কিন্তু ছোট থেকে একটি সংস্কার পেয়েছি কিছু জ্ঞান অর্জন করতে গেলে আগের বা পরের কোনো ধারণা রেখে তা করা যায় না। আর সহজ হতে শিখতে হয়। তবেই প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা যায়। আমি তো এই সংস্কার আমার পরিবার থেকে আর এই প্রকৃতি থেকে পেয়েছি। লোভে মত্ত বিদ্যার্থীর কানে এত সরল কথা ঢুকলো না। এই কথা সে আশ্রমে গুরু মুখে বহুবার শুনেছে। কিন্তু তার মায়িক মল তাকে অন্ধ করে রেখেছে। উদ্দেশ্যটা যে সেই ভগবতীকে পাওয়া সে ভুলে গেছে।
কিছু শিষ্য ছিল এমন যারা সাধনায় অনেক জ্ঞান পেতো। তারা ভাবলো তারা কি না জানি বিশাল মাপের সাধক। আসলে এই জ্ঞান আসে মূলত বিদ্যাধরদের থেকে। আর থাকে আমাদের এই মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা তরঙ্গ, সেই তরঙ্গর সাথে আমরা যখন সাধনায় একাত্ম হয়ে যাই সেই সময় নানা কথা চলে আসে, অহংকারী সাধক একেই ভাবে ঈশ্বর বোধ হয় তার জন্য এটাই ঠিক করেছেন; সে কত বড় সাধক কত অহেতুকী কৃপা তার ওপরে। বা তিনি তাই চাইছেন। আসলে ব্রহ্মান্ডের ইচ্ছা তারা কেউ জানেন না। তা যিনি ঠিক করেন এটি তারই লীলা। একেই ভুল করে আদিশঙ্কর মায়া বলে বলেছেন।
আরও একটা মজার ব্যাপার ঘটেছিলো সবাই আলাদা আলাদা ভাবে গুরুর কাছে কথা বলতে চাইত কোনো সমস্যার ছুতো নিয়ে বা কোনো জ্ঞানের বিশ্লেষণ নিয়ে। কিন্তু আমার পরম গুরু বলতেন আশ্রমে যখন সবাইকে বোঝাই তখন প্রশ্ন কোরো, তাহলে ওই বিষয়ে সবাই একেবারেই জানতে পারবে, কিন্তু কে কার কথা শোনে। যা গুরুদেব আশ্রমে বলেছেন তাঁকে আলাদা আলাদা করে প্রশ্ন করে বোঝার চেষ্টা করত কোথাও ভুল বা খুঁত খুঁজে পায় কিনা। আর কিছু যদি বেশি অন্যদের থেকে জেনে নেওয়া যায় এই সুযোগে। পরমগুরুদেব মনে মনে এদের কান্ড দেখে হাসতেন। সবাইকে গুরু সম্বন্ধে বোঝানোর জন্য একদিন ডাকলেন সকলকে। বললেন গুরু হল সূর্যের মত, সে সবার জন্য সমান ভাবে আলো দিচ্ছে, যারা বাইরে আছে তারা আলো পাচ্ছে আর যারা দেওয়াল বা আবরণের ভিতরে নিজেকে রেখেছে তারা আলো পাচ্ছে না। নিজেদের মনের আবরণকে উন্মোচিত করো, সহজ হও। না হলে আধ্যাত্মিক কেন কোনো কিছুতেই এগোতে পারবে না। এই যে এতো শাস্ত্র পড়ছো এতে শুধু এটাই নানা ভাবে বলা আছে। কারণ তোমার বিচার হলো তোমার জীবন। এই বিচার দিয়ে তুমি তোমার ভাগ্যকে তৈরী কর। গুরু কাউকেই বিশেষ ভাবে কিছু দেন না। গুরু সবাইকে তার সাধন শক্তি দেন জীবনের পথে এগোনোর জন্য। কিন্তু কেউ যদি ক্রমাগত বিচার করতে যাও সহজ ভাবে মেনে নিতে সমর্পণ করতে না পারো তাহলে কিছুই হবে না। কারণ শক্তি নিরুদ্ধ হয়ে তোমার পথকে আটকে দেবে। সমর্পণ চূড়ান্ত হলে তবেই তা ধীরে ধীরে ভক্তিতে রূপান্তর ঘটবে। ভক্তি মার্গ খুব কঠিন। অনেকে ভাবে আমার খুব ভক্তি। এই আমার শব্দ উচ্চারণের সাথে সাথেই কিন্তু ভক্তি পালিয়ে গেছে। সবাই এমন ভাব দেখালো যে তারা গুরুবাক্য খুব ভালো ভাবে বুঝেছে। সবাই সমস্বরে ধন্য ধন্য করতে লাগলো। দুজন সাধক কোনো কথা বলল না। একজন একদমই স্থির জড়বৎ বসে রইল।
সবাই ভাবলো এই দুজন নিশ্চই গুরুর থেকে বেশি কিছু পায় তাই এরা এমন চুপচাপ বসে থাকে। আগে থেকেই এদের সব গুরুর থেকে জানা হয়ে গেছে।
একবার গুরু সকলের পরীক্ষা নেবেন ঠিক করলেন। তিনজন মোটামুটি ভালো ফল করলো। গুরু তিনজনের খুব প্রশংসা করলেন। এখন এই প্রশংসা পেয়ে এই তিনজনের মাথা আরও বিগড়ে গেলো। তিনজনই ভাবতে লাগলো তিনজনই প্রথম। গুরু আরও তাদের উৎসাহিত করলো। আরও উদ্যম নিয়ে এগোতে বলল। কিন্তু লোভ ও মোহের বশবর্তী এরা নিজেদের মধ্যে নানা আলোচনা সমালোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সবাই ভাবছে ওকে বোধহয় বেশি কিছু দিয়েছে যা আমি পাইনি। আসলে অনেক গুলো লোভী মানুষ একসাথে এসে গেছিলো। এক সময় এরা একটা গোষ্ঠী তৈরী করে ফেলল এবং ডাকাতদের সাথে আলচনা করলো যে এনাকে মেরে এদের মধ্যে কেউ আশ্রমের দখল নেবে। কিন্তু হটাৎ আমার গুরুদেব নিরুদেশ হয়ে গেলেন। কাউকে কিছু না জানিয়ে। এই নিরুদ্দেশ হবার কারণে তাদের সেই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হল। কিন্তু নিজেদেরকে তারা বোঝালো যে উনি ভুল তাই এমন ঘটেছে।
অতি চালাক শিষ্যটি এই সময় গুরুর আরও শুভানুধ্যায়ী হবার জন্য খোঁজ চালাতে শুরু করলো। কিন্তু সেও কিছু ভ্রান্ত খবর পেল। বেশিরভাগ শিষ্য আশ্রম ছেড়ে চলে গেল। কেউ কেউ অন্য গুরকুলে ভর্তি হয়ে গেল। যে দু চার জন সেই ভরসাটা রেখেছিল তারাই শুধু থেকে গেল। তাদের দেওয়া গুরুনির্দেশ তারা শুধু নিষ্ঠা ভোরে পালন করে গেলো। একজন যত ছাড়লো তত সে চুপ করে নিশ্চল হয়ে গেল। জ্ঞানের রহস্য ভান্ডার তার কাছে নিত্য উন্মোচিত হতে লাগল। বাকি তিনজন তাদের সাধনার ক্রম অনুযায়ী উত্তর উত্তর উন্নতি করতে লাগলো।
গুরু দূর থেকে দেখে যেতে লাগলো তাদের আর তার শক্তিদেহ দ্বারা নিত্য এই চার জন শিষ্যদের সাধনায় অগ্রসর হতে সহায়তা করতে লাগল।
একদিন গুরু আশ্রমে ফিরলেন। আশ্রমিক চার জন কাঁদতে লাগলো তারা যা পেয়েছে তার কৃতজ্ঞতায়। প্রথম জন জানালো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কি বুঝেছি। দ্বিতীয়জন বলল নির্মল মন নিশ্চল মন কি বুঝলাম। তৃতীয় জন বলল অবধূত মার্গের সাধনার মূল লক্ষ্য অনন্ত জ্ঞান। আর চতুর্থ জন যে বেশিরভাগ নিশ্চুপ থাকতো সে বলল জ্যোৎ সে জ্যোৎ লাগাও। জ্যোৎ সে জ্যোৎ জাগাও।